ক্রীড়া ডেস্ক ॥ মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্ল্যসিকোতেও শেষ রক্ষা হলোনা বার্সেলোনার। করিম বেনজেমার দুর্দান্ত পারফরমেন্সে ঘরের মাঠ ভালডেবেবাসে চির প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে লা লিগা টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। এর আগে অক্টোবরে ক্যাম্প ন্যুতে প্রথম এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ গোলে কাতালান জায়ান্টদের হারিয়েছিল। করিম বেনজেমার ফ্লিক ও টনি ক্রুসের ডিফ্লেকটের ফ্রি-কিকে প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। অস্কার মিনগুয়েজার গোলে ৬০ মিনিটে বার্সেলোনা এক গোল শোধ করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চলতি মৌসুমে বার্সা ছাড়লে এটাই সম্ভবত লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে শেষ এল ক্লাসিকো ম্যাচ ছিল। এই জয়ে নগর প্রতিবেশী এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের সাথে সমান ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে জিনেদিন জিদানের দল। তাদের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বার্সা। বার্সেলোনা ও এ্যাথলেটিকো এখনো ক্যাম্প ন্যুতে একে অপরের সাথে মোকাবেলা করার বাকি আছে। যদিও শীর্ষ এই দুই দলের সাথে হেড-টু-হেডে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। সাম্প্রতিক সময়ে এ্যাথলেটিকোর একের পর এক ব্যর্থতায় রিয়াল ও বার্সার সামনে সুযোগ ছিল নিজেদের যতটা সম্ভব এগিয়ে নেবার। আর সে কারণে কালকের ম্যাচটি অনেকটাই এবারের লিগের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠেছিল। মে মাসে লিগ শিরোপা নির্ধারনে এই ম্যাচগুলোর ফলাফলই প্রভাব ফেলবে। আলফ্রেডো ডি স্টেফানোতে বৃষ্টিস্নাত ম্যাচটি হঠাৎ করেই দারুন উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। উভয় দলই বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছে। বেশ কিছু শট পোস্টে লেগে ফেরত এসেছে। ইনজুরি টাইমে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ত্যাগ করেছেন কাসেমিরো। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে বার্সেলোনার বদলী খেলোয়াড় ইলায়িক্স মোরিবার শট মাদ্রিদের পোস্টে লেগে ফেরত আসে। বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান বলেছেন, ‘আমরা এখনো লিগে ভালভাবেই টিকে আছি। আমরা আজ এমন একটি দলের কাছে হেরেছি যারা নিজেরাও লিগ শিরোপার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো লিগের আট ম্যাচ বাকি আছে এবং আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’ কাসেমিরোর লাল কার্ডে প্রাপ্ত ফ্রি-কিক থেকে মেসি নাটকীয় সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু আর্জেন্টাইন এই তারকা এনিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে টানা সাত ম্যাচে গোলবিহীন থাকলেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ৪৫তম ক্ল্যাসিকোটা স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না মেসি। মেসি হয়ত সবাইকে মনে করিয়ে দিতে পারেন লিগ শেষ হতে এখনো আট ম্যাচ বাকি আছে, কিন্তু মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে লিভারপুলকে প্রথম লেগে ৩-১ গোলে গুড়িয়ে দিয়ে দারুন ছন্দে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ কাল কিছুটা হলেও প্রমান করে ফেলেছেন শিরোপাটা ধরে রাখা তাদেরই প্রাপ্য। আগমী সপ্তাহে এ্যানফিল্ডে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটিতেও সহজ জয় তুলে নেবার সুযোগ মাদ্রিদেও রয়েছে। যদিও মাদ্রিদ বস জিদান স্বীকার করেছেন খেলোয়াড়দেরও শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ‘এটা একটি কঠিন ম্যাচ ছিল। প্রথমার্ধ আমাদের হলেও দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভুগেছি। এই জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। কারণ তৃতীয় গোলের জন্য আমরা বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছি।’ শুরু থেকেই দু’দল আক্রমনাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানের একটি ভুলে বেনজেমা প্রায় গোলই পেয়েই গিয়েছিলেন। অন্যদিকে মেসির ক্রস জোর্দি আলবার কাছে পৌঁছানোর আগেই থিবাট কুর্তোয়া তা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেন। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে মধ্যমাঠ থেকে ফেডে ভালভার্দে অনেকটা এগিয়ে থাকা লুকাস ভাসকুয়েজকে বল এগিয়ে দেন। ভাসকুয়েজের ক্রস থেকে পোস্টের সামান্য বাইরে থেকে বেনজেমার ফ্লিকে এগিয়ে যায় রিয়াল। এক গোলে পিছিয়ে থেকে বার্সেলোনা আরো নার্ভাস হয়ে পড়ে। মাদ্রিদের গতির কাছে বারবার তাদের হার মানতে হয়। বিশেষ করে রিয়ালের তরুন ব্রাজিলিয়ান ভিনসিয়াস জুনিয়র ছিলেন অনবদ্য। ভিনসিয়াসতে আটকাতে গিয়ে বক্সের ঠিক বাইরে ফাউল করে বসেন রোনাল্ড আরাওজো। ক্রুসের ফ্রি-কিক সার্জিনো ডেস্টের পিঠে লেগে জালে জড়ালে ২৮ মিনিটে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। বিরতির আগে মেসি ও ভালভার্দে উভয়ই পোস্টে বল লাগিয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে ডেস্টের পরিবর্তে আঁতোয়ান গ্রীজম্যানকে মাঠে নামান কোম্যান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হতে থাকে। ক্রুস ও বেনজেমা উভয়ই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন। আলবার ক্রস থেকে গ্রীজম্যানের হেড পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। আলাবার আরো একটি প্রচেষ্টা কুর্তোয় ভেস্তে দেন। ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে জিদান একসাথে বেনজেমা, ভিনসিয়াস ও ক্রুসকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন। তার আগে অবশ্য মিনগুয়েজার সুবাদে বার্সা এক গোল পরিশোধ করে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে মার্টিন ব্রেথওয়েইটকে কনুই দিয়ে আঘাতের অভিযোগে ফারলান্ড মেন্ডির বিপক্ষে পেনাল্টির জোড় আবেদন জানিয়েছিল বাসেলোনা। কিন্তু রেফারি গিল মানজানো তা নাকচ করে দেন। মিনগুয়েজাকে চ্যালেঞ্জের সুবাদে ৯০ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করেন ক্যাসেমিরো। সেই ফাউল থেকে প্রাপ্ত ফ্রি-কিকে মেসির শটটি কুর্তোয়া সহজেই রুখে দেন।
Leave a Reply